প্রক্ষাপট ও উৎপত্তিঃ
১৯৩৩ সালে ঢাকার মনিপুরি খামারে আখের চারা পরীক্ষাগার স্থাপিত হয়েছিল। যা ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত ভারতের রয়েল ইম্পেরিয়াল কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচার এর অর্থায়নে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত পরিচালিত হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের কৃষি মন্ত্রণালয় এটিকে “ইক্ষু গবেষণা স্টেশন” নামে পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতে স্থাপন করেছিল। সীমিত জনবল সত্ত্বেও আখের উন্নত জাতসমূহ চিহ্নিত করাই ছিল প্রতিষ্ঠানটির মূল কাজ। ১৯৭৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কৃষি মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠানটিকে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন (বিএসএফআইসি) এর কাছে স্থানান্তর করে এবং ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট নামকরণ করা হয়। যা পরবর্তীতে ১৯৮০-৮১ অর্থবছরের একনেক সভায় ইক্ষু গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট হিসেবে অনুমোদিত হয়। ১৯৯৬ সালে এপ্রিল মাসে কেবিনেট সভার সিদ্ধান্তে সেটি বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট নামে আত্মপ্রকাশ পাওয়ার পাশাপাশি শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে আসে ও জাতীয় ইনস্টিটিউট হিসেবে উন্নীতকরণ হয়। বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরাতন গবেষণা প্রতিষ্ঠান যেটি মুলত ইক্ষু (চিনির কাচামাল, গুড় ও রস) নিয়ে গবেষণা করে আসছিল। সম্প্রতি আখের পাশাপাশি অন্যান্য মিষ্টি জাতীয় ফসল যেমনঃ সুগারবিট, খেজুর, তাল, গোলপাতা, স্টেভিয়া ইত্যাদির গবেষণার মাধ্যমে এক নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। ২০১৫ সালের ৯ নভেম্বর সরকারের নির্দেশনায় প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট( বিএসআরআই) নামকরণ করা হয়। সীমিত জনবল ও সম্পদ থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটি জাতির চিনি ও গুড়ের চাহিদা পূরণে গবেষণা কার্যক্রম সম্পন্ন করছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ২ টি কাজ হচ্ছেঃ ১) আখের উন্নত জাত ও আধুনিক চাষাবাদ প্রযুক্তি উন্নত করা। ২) চাষীদের মধ্যে সেই উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সরবরাহ করা।
জৈব প্রযুক্তি গবেষণা কার্যক্রম জোরদারকরণ করা হছে মুলত প্রাচীন গবেষণার বাধা ও সীমাবদ্ধতা গুলোকে কাটিয়ে ওঠার জন্য। ১৯৯৭ সালে বিএসআরআই তে জৈব প্রযুক্তি গবেষণা কার্যক্রম শুরু হয় নিজস্ব পরীক্ষাগার স্থাপনের মধ্য দিয়ে যেটি ২০১১ সালের ২৭ শে ফেব্রুয়ারি জৈবপ্রযুক্তি বিভাগে রূপান্তরিত হয়। ১৯৯৭ সাল থেকে অদ্যবদি বিভাগটি বিভিন্ন মিষ্টিজাতীয় ফসলের মাইক্রোপ্রোপাগেশন ও জাত উন্নয়নে সোমাক্লোনাল প্রাট্রোকল তৈরীর কাজ, প্রতিকুর পরিবেশ সহিষু্ঞ জাত উন্নয়নে জেনেটিক ট্রান্সফর্মেশন। অবমুক্ত হওয়া জাত সহ কিছু লোকাল জার্মপ্লাজমের ডিএনএ ফিংগার প্রিন্টিং ও মলিকুলার মার্কারের সাহায্যে আনবিক বৈচিত্র্য বিশ্লেষণ করা হয়। মলিকুলার মার্কার মুলত মার্কারের সাহায্যে জাত চিহ্নিতকরণের একটি আধুনিক পদ্ধতি।
জনবলঃ
এগ্রিকালচারাল রিসার্চ ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্টের (ARMP) অর্থায়নে একজন বিজ্ঞানী (ড. মোঃ আমজাদ হোসেন, প্রাক্তন সিএসও ও বিভাগীয় প্রধান, বায়োটেকনোলজি বিভাগ) বায়োটেকনোলজি এ্যান্ড মলিকুলার ব্রিডিং বিষয়ে জাপান থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন এবং বর্তমানে মহপিরিচালক হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। বিএআরসি- এনএটিপি (ফেজ-১) এসপিজিআর (SPGR) প্রজেক্ট এর অর্থায়নে বিজ্ঞানী (ড. কুয়াশা মাহমুদ, সিএসও (চলতি দায়িত্ব) বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োটেকনোলজি বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন । তিনি Somaclonal Breeding using Mutagens and Molecular Techniques এর উপর গবেষণার কাজ করেন ও বর্তমানে বায়োটেকনোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। “Strengthening Biotechnological Research of BSRI” প্রজেক্ট এর অর্থায়নে বিজ্ঞানী ড. নাদিরা ইসলাম, এসএসও, থাইল্যান্ডের ক্যাসেটসার্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে থেকে বায়োটেকনোলজি বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন এবং তার গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল “Cloning of Antisense SCLIM Gene”।
জনাব আশিষ কুমার ঘোষ, এসএসও, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োটেকনোলজি বিষয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন্। জনাব মোঃ আব্দুল আজিম, এসও, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োটেকনোলজি বিষয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন্। জনাব রাশেদুর রহমান রাজীব, এসও, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োটেকনোলজি বিষয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন্।
বর্তমান গবেষণা অগ্রগতিঃ
১. আখসহ অন্যান্য মিষ্টিজাতীয় ফসলের মাইক্রোপ্রোপাগেশনের মাধ্যমে অনুচারা তৈরীর লক্ষ্যে পত্রখন্ড ব্যবহার করে ক্যালাস, কান্ডশীর্ষ ব্যবহার করে কালচার, মেরিস্টেম কালচারের প্রটোকল উন্নত করা।
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (Genetic Engineering)
প্রতিকুল পরিবেশ সহিষ্ঞু আখ সহ অন্যান্য মিষ্টিজাতীয় ফসলের ট্রান্সজেনিক গাছ তৈরীর লক্ষ্যে জেনেটিক ট্রান্সফর্মেশন করা হচ্ছে।
আনবিক প্রজনন (Molecular Breeding)
আখসহ অন্যান্য মিষ্টিজাতীয় ফসলের জাত উন্নয়নে চিনি, গুড়, রস ও স্টেভিওসাইড বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন উন্নত বায়েটেকনোলজিক্যাল পদ্ধতি যেমনঃ ডিএনএ ফিংগারপ্রিন্টিং (DNA Fingerprinting), আনবিক মার্কারের সাহায্যে নির্বাচন (Molecular Marker Assisted Selection (MAS) এবং কিউটিএল (Quantitative Trait Loci (QTLs) নির্ধারণ করে যাচ্ছে।
শিক্ষাগত কার্যক্রমঃ
৬ জন পিএইচডি ছাত্র (তন্মদ্ধে ৩ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক) তাদের গবেষণার কাজ বিএসআরআই এর বায়োটেকনোলজি বিভাগে সম্পন্ন করেছে। এছাড়াও ২ জন পিএইচডি ও ২৭ জন মাস্টার্স ছাত্র তাদের গবেষণা কাজ সম্পন্ন করেছে।
ভবিষ্যত প্ল্যানঃ
১. আখসহ অন্যান্য মিষ্টিজাতীয় ফসলের মার্কারের সাহায্যে নির্বাচন প্রযুক্তি উন্নত করা।
২. আখসহ অন্যান্য মিষ্টিজাতীয় ফসলের নতুন জাত উন্নয়নে QTL (Quantitative Trait Loci) নির্ধারণ করা।
৩. নির্দিষ্ট কাজের জন্য আখসহ বিভিন্ন মিষ্টিজাতীয় ফসলের জিনোম এনালাইসিস করা।