ইতিহাস
ভারতের কোয়েম্বাটরে ১৯১২ সালে ‘ইক্ষু প্রজনন কেন্দ্র’ স্থাপনের মাধ্যমেই শুরু হয়েছিল এ উপমহাদেশে প্রথম ইক্ষু গবেষণা কার্যক্রম আর বাংলাদেশে তা শুরু হয়েছিল ১৯৩৩ সালে। বিএসআরআই এর সেই ক্রম-বিবর্তনের ইতিহাস এখানে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলঃ
ইক্ষুচারা পরীক্ষাগার (১৯৩৩-১৯৪৭):
কোয়েম্বাটর এর ইক্ষু প্রজনন কেন্দ্র থেকে ইক্ষুর প্রকৃত বীজ (fuzz) সংগ্রহ করে এ এলাকার উপযোগী উন্নত জাত বাছাই করার জন্য ১৯৩৩ সালে ঢাকার মনিপুরী ফার্মে Seedling Testing Laboratory বা ইক্ষুচারা পরীক্ষাগার স্থাপিত হয়। তদানীন্তন বৃটিশ সরকারের Royal Imperial Council of Agriculture এর অর্থানুকূল্যে এ পরীক্ষারগারটি পরিচালিত হতো এবং ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তা কার্যকর ছিল। এ পরীক্ষাগার থেকে বাছাইকৃত কিছু কিছু ইক্ষুজাত যেমন Co ৪১৯, Co ৫২৭ প্রভৃতি আজও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় চাষাবাদ হচ্ছে।
ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্র (১৯৫১-১৯৭১):
১৯৫১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতে মাত্র ১৭ জন জনবল নিয়ে ‘ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্র’ স্থাপন করেন। তখন কেন্দ্রটির কার্যক্রম শুধুমাত্র ইক্ষু প্রজনন এবং জাত বাছাই এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এ কেন্দ্র থেকে নয়টি ইক্ষুজাত উদ্ভাবন করা হয়, যার মধ্যে ঈশ্বরদী ১/৫৩ এবং ঈশ্বরদী ২/৫৪ দেশের বিভিন্ন স্থানে এখনও চাষাবাদ হচ্ছে। ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্রের অধিকতর উন্নয়নকল্পে তদানীন্তন পাকিস্তান সরকারের ‘খাদ্য ও কৃষি কাউন্সিল’ কেন্দ্রটিকে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে ন্যস্ত করে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য কোন উন্নতি ছাড়াই ১৯৬৫ সালে কেন্দ্রটিকে পুণরায় প্রাদেশিক সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ে ফেরৎ দেয়। ফলে জনবল ও গবেষণার সীমিত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে এ কেন্দ্রটি প্রায় ধ্বংসই হয়ে যায়।
ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট (১৯৭১-১৯৭৯):
দেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭৩ সালে ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্রটিকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন তৎকালীন বাংলাদেশ চিনিকল সংস্থার (বর্তমান বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থা) নিকট হস্তান্তর করা হয়। বাংলাদেশ চিনিকল সংস্থার ১৯৭৪ সালে ‘ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট’ নামে একটি প্রকল্প প্রণয়ন করে যা ঠাকুরগাঁওস্থ আঞ্চলিক কেন্দ্রসহ একনেক (ECNEC) কর্তৃক অনুমোদিত হয়।
ইক্ষু গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (১৯৮০-১৯৮৮):
দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকালে (১৯৮০-৮৫) বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থা ঈশ্বরদী ও ঠাকুরগাঁও-এ ‘স্টাফ ট্রেনিং সেন্টার’ স্থাপনের লক্ষ্যে পরিকল্পনা কমিশনে একটি প্রকল্প পেশ করে। প্রকল্পটি বিবেচনাকালে প্রস্তাবিত ‘স্টাফ ট্রেনিং সেন্টার’টি ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাথে যুক্ত করে অনুমোদন দেওয়া হয় এবং ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউটের নাম পরিবর্তন করে ‘ইক্ষু গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট’ করা হয়।
বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট (১৯৮৯-২০১৫):
সরকার ১৯৮৯ সালে একটি ক্যাবিনেট সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ইক্ষু গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনষ্টিটিউটকে জাতীয় প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থা থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করে এবং সমগ্র দেশব্যাপী ইক্ষু গবেষণার পাশাপাশি খেজুর, তালসহ অন্যান্য মিষ্টি জাতীয় ফসলের উপর গবেষণার দায়িত্বও অর্পণ করে। ১৯৯৬ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতি নির্বাহী আদেশ বলে ইক্ষু গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনষ্টিটিউটকে বিলুপ্ত করে ‘বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট’ স্থাপন করেন (অধ্যাদেশ নং ২৩, ১৮ জুন ১৯৯৬)। এ আইনের দ্বারা বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউটকে একটি স্বশাসিত জাতীয় প্রতিষ্ঠানে উন্নয়নপূর্বক চিনি, গুড় ও অন্যান্য মিষ্টিজাতীয় ফসলের উপর সার্বিকভাবে গবেষণার জন্য নতুন দায়িত্ব প্রদান করা হয়। অতঃপর ১৯৯৬ সালের ১৭ আগষ্ট গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন (১৯৯৬ সনের ১১ নং আইন, ১৭ আগস্ট, ১৯৯৬) প্রণীত হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশের অন্যান্য স্বশাসিত কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান (NARS) এর অনুরূপ ব্যবস্থাপনা প্রবর্তনের লক্ষ্যে ২০০২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তারিখে ঐ আইনটি পুণরায় সংশোধিত হয় (বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট [সংশোধন] আইন, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০০২)।
বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট (২০১৫- ):
২০১৫ সালের ০৯ নভেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতির নির্বাহী আদেশ বলে বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট (Bangladesh Sugarcane Research Institute) এর নাম পরিবর্তন করে সরকার বাংলায় ‘বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট’(বিএসআরআই) এবং ইংরেজীতে Bangladesh Sugarcrop Research Institute (BSRI) প্রজ্ঞাপন জারী করিয়াছে। বর্তমানে অত্র প্রতিষ্ঠান ইক্ষুসহ তাল, খেজুর, গোলপাতা, সুগারবিট, স্টেভিয়া ইত্যাদি মিষ্টি জাতীয় ফসলের গবেষণা , প্রযুক্তি ও কলাকৌশল উদ্ভাবন অব্যাহত রেখেছে।