বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএসআরআই) এদেশের একটি অগ্রজ গবেষণা প্রতিষ্ঠান যেখানে গবেষণা হয় ইক্ষু, তাল, খেজুর, গোলপাতা ও সুগারবীট এর উপর এবং চিনি, গুড় ও চিবিয়ে খাওয়াসহ ইক্ষুর বহুমুখী ব্যবহারের উপর। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের স্বল্প বৃষ্টিপাত এলাকার একমাত্র নির্ভরযোগ্য অর্থকরী ফসল ইক্ষু। ইক্ষুর উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের মিষ্টিজাতীয় খাদ্যের উৎস চিনি ও গুড় তৈরীর শিল্প।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO) মতে একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির বছরে ১৩ কেজি চিনি বা ১৭ কেজি গুড় খাওয়া দরকার। বাংলাদেশে এই পরিমাণ এখনও ৩ কেজির নীচেই রয়েছে। মাথাপিছু চিনি গ্রহণের পরিমাণ ৬ কেজি ধরা হলেও আগামী ২০২০ সালে (জনসংখ্যা ১৮ কোটি ৩৩ লক্ষ) দেশে চিনি ও গুড়ের প্রয়োজন হবে ৯.২ লক্ষ টন। বর্তমানে দেশে প্রায় ১.৮ লক্ষ হেক্টর জমিতে ইক্ষু চাষ হয় (এর মধ্যে ১ লক্ষ হেক্টর চিনিকল এলাকায় এবং ০.৮ লক্ষ হেক্টর চিনিকল বহির্ভূত গুড় এলাকায়) এবং এ থেকে সর্বমোট ৭৩ লক্ষ টন ইক্ষু উৎপাদিত হয়। এতে ইক্ষুর গড় ফলন দাঁড়ায় ৪০.৫২ টন/হেক্টর (চিনিকল এলাকায় ৪৬ টন/হেক্টর, গুড় এলাকায় ৩৬ টন/হেক্টর)। চাহিদানুযায়ী প্রতিবছর ৯ লক্ষ টন চিনি ও গুড়ের জন্য দরকার মোট ১ কোটি ১১ লক্ষ টন ইক্ষু। ইক্ষুর হেক্টর প্রতি উৎপাদন বৃদ্ধি না হলে ঐ পরিমান ইক্ষু উৎপাদন সম্ভব নয়। আর সেজন্যই প্রয়োজন ব্যাপক গবেষণা।
বিএসআরআই তার সীমিত জনবল ও সম্পদ নিয়েই দেশের চিনি ও গুড় উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। মূলত এ ইনস্টিটিউট থেকে দু’ধরণের কাজ সম্পাদিত হয়ঃ- (ক)ইক্ষু, তাল, খেজুর, গোলপাতা ও সুগারবীট এর উন্নত জাত ও উন্নত উৎপাদন কলা-কৌশল উদ্ভাবন এবং (খ) উদ্ভাবিত উন্নত জাত ও উৎপাদন কলাকৌশলসমূহ ইক্ষুচাষীদের মধ্যে বিস্তার ঘটানো। আটটি গবেষণা বিভাগ, একটি সংগনিরোধ বা কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র এবং দু’টি আঞ্চলিক কেন্দ্রের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে এর গবেষণা উইং। অন্যদিকে প্রযুক্তি হস্তান্তর উইং গঠিত হয়েছে দু’টি প্রধান বিভাগ, ছয়টি উপকেন্দ্র এবং তিনটি শাখার সমন্বয়ে। প্রযুক্তি হস্তান্তর উইং সাধারণত ইক্ষুচাষী ও সম্প্রসারণ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়, চাষীর জমিতে নতুন প্রযুক্তিসমূহের প্রদর্শনী স্থাপন করে, বিভিন্ন ধরণের প্রকাশনার মাধ্যমে চাষাবাদের নতুন খবরাখবরের বিস্তারন ঘটায়, চাষীর জমিতে নতুন প্রযুক্তির উপযোগিতা যাচাই করে এবং এর ফিড-ব্যাক তথ্য সংগ্রহ করে।