রোপা পদ্ধতিতে ইক্ষু চাষ (STP)
বিভিন্ন পদ্ধতিতে ইক্ষু চারা উৎপাদন, চারার পরিচর্যা ও মূল জমিতে রোপণ।
সরাসরি মাঠে বীজখন্ড রোপণের পরিবর্তে চারা তৈরী করে ইক্ষু চাষ করাকে রোপা আখ চাষ বলে। রোপা পদ্ধতিতে ধানের মত বীজ তলায় চারা উৎপাদন করে সেই চারা মূল জমিতে নির্দিষ্ট দূরত্বে রোপণ করা হয়। সরাসরি বীজখণ্ড মাঠে রোপণের পরিবর্তে চারা উৎপাদন করে রোপণ করায় চারাগুলির মধ্যে সুনির্দিষ্ট ও সমান দূরত্ব বজায় রেখে প্রয়োজনীয় সংখ্যক মাড়াইযোগ্য ইক্ষু উৎপাদনের মাধ্যমে ইক্ষুর ফলন বৃদ্ধি নিশ্চিত করা রোপা পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য।
সুবিধা :
বিভিন্ন পদ্ধতিতে ইক্ষু চারা উৎপাদন ঃ
ব্যাগ চারা পদ্ধতি :
রোপা আখ চাষ পদ্ধতি সমূহের মধ্যে ব্যাগ চারা পদ্ধতিই সবচেয়ে ভাল। এই পদ্ধতিতে পলিথিন বা চটের তৈরী ব্যাগে মাটি ও গোবর মিশ্রন ভর্তি করে তাতে একচোখ বিশিষ্ট বীজ খন্ড স্থাপন করে চারা উৎপাদন করা হয়। সেচের সুবিধা নেই এমন বৃষ্টি নির্ভর অবস্থায়ও এ পদ্ধতিতে রোপা আখের চাষ করা যায়।
সাধারন বীজতলা পদ্ধতি :
এ পদ্ধতিতে বীজতলা বা বেডে চারা উৎপাদন করা হয়। চারা উৎপাদনের জন্য বীজতলা তৈরী করে তার উপর আখের পাতা/ ধানের খড়/ কচুরী পানা বিছিয়েও বেড তৈরী করা যায়। বীজতলায় এক বা দুই চোখ বিশিষ্ট বীজ খন্ড পাশাপাশি স্থাপন করে চারা উৎপন্ন করা হয়। বেডে পর্যাপ্ত রস না থাকলে মাঝে মাঝে সেচ দিতে হয়। বেডে আখের চারা গজানোর পর কিছুদিন পর পর পাতা ছেঁটে চারা ছোট রাখা প্রয়োজন। সুস্থ রোগমূক্ত ও সবল চারা ৪০-৪৫ দিন বয়স বা চারা ৪-৫ পাতা বিশিষ্ট হলে মূল জমিতে রোপন উপযোগী হয়।
গাছ চারা (রাইউনগান) পদ্ধতি :
এ পদ্ধতিতে জমিতে দন্ডায়মান আখেই চারা উৎপন্ন করা হয়। মূল জমিতে চারা রোপনের প্রায় ৩০-৪৫ দিন পূর্বে নির্বাচিত বীজ ক্ষেতে আখের মাথা কেটে দিতে হবে। এর ফলে পার্শ্বকুশি গজাবে। পাশ্বকুশি যাতে খুব লম্বা না হয় তার জন্য মাঝে মাঝে পাতা ছেঁটে দিতে হবে। এ সমস্ত পার্শ্বকুশি আখের সাথে সংযুক্ত স্থানে আলাদা আলাদা করে কেটে স্টক সহ বা স্টকলেস অবস্থায় প্রয়োজনীয় হরমোন শোধন করে মূল জমিতে রোপন করা হয়।
ল্যাটারাল স্যুট পদ্ধতি :
এ পদ্ধতিতেও গাছ চারার ন্যায় জমিতে দন্ডায়মান আখ গাছেই চারা উৎপন্ন করা হয়, তবে একই চারা বারবার কেটে একটি বাড থেকে অনেকগুলো চারা উৎপাদন করা হয়। মূল জমিতে চারা রোপনের প্রায় ৪৫-৬০ দিন পূর্বে নির্বাচিত বীজ ক্ষেতে আখের মাথা কেটে দিতে হয়। এর ফলে পার্শ্ব কুশি গজাবে। প্রাথমিক পর্যায়ে গজানো পার্শ্ব কুশি ১০-১২ দিন পরে আবার কেটে দিতে হবে। এভাবে মূল জমিতে চারা রোপনের একমাস আগ পর্যন্ত কয়েকবার গজানো পার্শ্ব কুশি কেটে কেটে একটি বাড থেকে অনেকগুলো (৮-১০ টি) চারা উৎপন্ন করা যায়। এ সমস্ত পার্শ্বকুশি আখের সাথে সংযুক্ত স্থানে আলাদা আলাদা করে কেটে স্টকলেস অবস্থায় মূল জমিতে রোপন করা হয়।
স্টকলেস পদ্ধতিতে রোপা আখ চাষ :
এ পদ্ধতিতে বীজতলায় অথবা গাছে উৎপাদিত চারা ৪০-৪৫ দিন বয়সে স্টক (মাতৃকান্ড) থেকে আলাদা এবং পাতা ছাটাই করে মূল জমিতে রোপন করা হয়। স্টকলেস চারায় দ্রুত শিকড় গজানোর জন্য শিকড়ের দিক এক লিটার পানিতে ৫ এম এল ন্যাপথালিন এসিটিক এসিডে ২৪-৭২ ঘন্টা ডুবিয়ে রেখে/ ২৪-৩৬ ঘন্টা পানিতে চুবিয়ে রেখে মূল জমিতে চারা রোপণ করতে হবে। চারা রোপণের পরপরই ১টি বা প্রয়োজন বোধে ২ টি জীবনী সেচ প্রয়োগ করতে হয়। এই পদ্ধতিতে রোপনকৃত চারার মৃত্যূ হার তুলনামূলক কম।
চোখ চারা/ বাডচিপ পদ্ধতি :
এ পদ্ধতিতে আখের কান্ড থেকে চোখ সংগ্রহ করে পলিব্যাগ/ চটের ব্যাগ/ বীজতলায় উৎপাদিত চারা ৪০-৪৫ দিন বয়সে মূল জমিতে রোপন করা হয়। এ পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় বীজের পরিমান অন্যান্য যে কোন পদ্ধতির চেয়ে কম। তবে চারা উৎপাদন এবং মূল জমিতে রোপনের সময় বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে যেন চারা নষ্ট না হয়ে যায়।
চারার পরিচর্যা :
মূল জমিতে রোপণ :
জমি গভীর ভাবে চাষ ও মই দিয়ে নির্দিষ্ট দুরত্বে ১ মিটার পর পর লাঙ্গল/ ট্রেঞ্চার/ কোদাল দিয়ে নালা তৈরী করতে হবে। নালায় সব ধরনের সার দিয়ে নালার মাটিকে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে সার মিশিয়ে দিতে হবে। ব্যাগ চারার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দুরত্বে ৪০-৫০ সে. মি. পর পর নালায় চারা রোপন করতে হবে। রোপনের পর চারার গোড়ার মাটি ভাল ভাবে চাপ দিয়ে শক্ত করে দিতে হবে যাতে চারাটি বাতাসে নড়ে বা সেচ দেওয়ার সময় উঠে না যায়। রোপনের পর পরই ১ টি অথবা প্রয়োজন বোধে ২ টি জীবনী সেচ প্রয়োগ করতে হবে।বেড অথবা যে কোন গাছ চারার ক্ষেত্রে নালায় সার মিশিয়ে কোদাল দিয়ে মাটি আলগা করে নালায় পানি দিয়ে রোপা ধানের মত আখের চারা নির্দিষ্ট দূরত্বে ৩০-৪৫ সে. মি. পর পর রোপন করতে হবে, এতে চারার মরে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে এবং জমিতে গ্যাপ কম হয়।